ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের শেষ প্রান্তের প্রত্যন্ত গ্রাম তৈলকুপী। পাখি ডাকা সুনিবিড় সবুজ বেষ্টিত এই গ্রামে অবস্থিত নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের নলডাঙ্গা বাজারের পাশ ঘেঁষে এই গ্রামটিতে রয়েছে ভূষণ রাজার নানা স্মৃতি।
জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং কালীগঞ্জ শহর থেকে নলডাঙ্গা সড়ক ধরে মাত্র চার কিলোমিটার পথ গেলেই তৈলকুপী গ্রাম।
এই গ্রামেই ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট নামে এই বিনোদন কেন্দ্রটি। গ্রামে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে পার্কটির বিশালাকারের প্রধান ফটক।
যেখানে স্মৃতি বহন করছে রাজার রাজমহলের। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে নান্দনিক, নৈসর্গিক অপরূপ প্রাকৃতিক সোন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। ২০ একর জমির ওপর নির্মিত এই পার্কে রয়েছে মায়াবী স্পট, কৃত্রিম অভয়ারণ্য ও ডুপ্লেক্স কর্টেজ। রয়েছে শিশু-কিশোরদের জন্য একাধিক রাইড, সুবিশাল টলটলা পানির লেক, হংসরাজ প্যাডেল বোট, ওয়াটার পার্ক, পাহাড় এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য রেডি মঞ্চ। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত নয়নাভিরাম পার্কে নিরাপত্তা কর্মীর তত্ত্বাবধানে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। যা দেখতে গত বছরও ভিড় করত হাজার হাজার দর্শক। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন বয়সি দর্শনার্থীরা। ফলে কিছুটা হলেও বিগত দিনের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন পার্কের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মতিন পাতা মিয়া।
স্থানীয় বাসিন্দা আহসান কবির জানান, সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশে শিশু ও কিশোরদের পাশাপাশি সকল শ্রেণির মানুষ অবকাশ কাটাতে এখানে এসে থাকেন। আর এই পার্কটি ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার বেকার যুবকদের।
চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানা থেকে আসা সুমাইয়া খাতুন নামের এক শিক্ষার্থী জানান, করোনার মাঝে দীর্ঘদিন ঘর বন্দি ছিলাম। সপরিবারে এখানে এসে পার্কের সুন্দর পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে।
যশোর থেকে আসা বসির আহমেদ নামের এক স্কুল শিক্ষক জানান, নলডাঙ্গা পার্কের নাম শুনেছিলাম। কিন্তু সময়ের কারণে আসার সুযোগ হয়নি। এখানে এসে পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে। এত সুন্দর মনোরম পরিবেশ যে বলে বোঝানো যাবে না।
পার্কের কর্মচারী মিঠুন হোসেন জানান, ইতিপূর্বে প্রতিদিন পার্কে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসত। বর্তমানে করোনার মাঝে পার্কে দর্শনার্থী কমে যায়। এখন আবার আসতে শুরু করেছে।
পার্কের ম্যানেজার আলাউদ্দিন খান জানান, আমরা যারা এখানে কর্মচারী আছি করোনার মধ্যে পার্কে কোনো আয় না থাকলেও আমাদের মালিক প্রত্যেকের বেতন দিয়ে যাচ্ছে।
ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এএসআই) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ফাঁড়ির পাশেই পার্ক হওয়ায় আমরা সব সময়ই খেয়াল রাখি। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সময়ই পুলিশ টহল দেওয়া হয়।
নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পটের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) ইমদাদুল হক সোহাগ জানান, আমাদের ঝিনাইদহ জেলার ইতিহাস মানেই নলডাঙ্গা রাজবাড়ীর ইতিহাস। সেই ইতিহাসের ধারক ও বাহক এখন রাজবাড়ী রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট। এই ইতিহাস সংরক্ষণ করার জন্যই আমার পিতা আব্দুল মতিন পাতা মিয়া পার্কটি স্থাপন করেন।